গৌরনদীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ি ভেঙে পড়ল

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ি ভেঙে পড়েছে। এতে দুই নির্মাণশ্রমিক আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সিঁড়িটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের নরসিংহলপট্রি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের বরিশাল কার্যালয়, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংহলপট্রি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক আবদুর রাজ্জাক সেরনিয়াবাতের নামে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মো. দেলোয়ার হোসেন নামের মাদারীপুরের এক ঠিকাদার প্রকল্পটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে নির্মাণকাজ শুরু করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল ইসলাম জানান, গত ডিসেম্বরে ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন নতুন দ্বিতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেন। জানুয়ারিতে প্রথম তলার সিঁড়িসহ একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে করেন দোতলার সিঁড়িসহ দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। তবে সে কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চ স্কুল বন্ধ থাকলেও মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলে আসি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে নির্মাণাধীন ভবনের পুরো সিঁড়ি ভেঙে পড়ে। এতে দুজন নির্মাণশ্রমিক সামান্য আহত হন।’

বিদ্যালয় অভিভাবক কমিটির সভাপতি মো. অলিউর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ি ভেঙে ধসে পড়ে। এতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে আগত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো অনিয়মের মাধ্যমে নির্মাণ করেছেন। কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ভবনের কাজ শেষ হয়নি, এখনই সিঁড়ি ভেঙে পড়েছে। ভবিষ্যতেও তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. অহিদুজ্জামান সরেজমিন এসে দেখে যান এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন করে সিঁড়ি নির্মাণের নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রভাবশালী ঠিকাদার কাজের শুরুতে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম করেছেন ও নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করা হলেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।

ঠিকাদার মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে নিজের পরিচয় গোপন রেখে এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি বলেন, সিঁড়ি ধসে পড়েনি। কাজে কিছু ত্রুটি থাকায় উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে সিঁড়ি ভেঙে নতুন করে করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ঠিক নয়।

গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. অহিদুজ্জামান বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ির ভার ধারণের ক্ষমতা না থাকায় সিঁড়িটি ভেঙে পড়েছে। সিঁড়ির কাজে কিছু ত্রুটি থাকায় সেটি নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।